ফরিদপুরে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার নতুন মাত্রা পেয়েছে। কোতোয়ালি থানার পূর্ব খাবাসপুর তালতলা শেষ মাথা কালা গ্রাম এলাকায় ফেনসিডিলের পরিবর্তে বর্তমানে ভারতীয় কাশির সিরাপ CORE-X এর জমজমাট অবৈধ ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, CORE-X সিরাপটি ফেনসিডিলের চেয়েও অধিক ক্ষতিকর ও ভয়ংকর। এ মাদক নিয়মিত সেবনের ফলে এলাকার যুব সমাজের মধ্যে বিবেক, বুদ্ধি ও স্বাভাবিক জীবনযাপন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক যুবক মাদকাসক্ত হয়ে পড়ায় সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন ভেঙে পড়ছে।
মাদকাসক্তির সরাসরি প্রভাব পড়ছে ফরিদপুর শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর। দিন দিন চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন।
CORE-X কী?
CORE-X মূলত একটি ভারতীয় কাশির সিরাপ, যা চিকিৎসার জন্য তৈরি হলেও বাংলাদেশে এটি অবৈধভাবে মাদক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
CORE-X-এ কী থাকে?
এই ধরনের কাশির সিরাপে সাধারণত থাকে, Codeine Phosphate, মাদকজাত উপাদান (অপিওয়েড) Chlorpheniramine Maleate ঘুম ও ঝিমুনি সৃষ্টি করে কখনো Promethazine বা অনুরূপ উপাদান।
এসব উপাদান একত্রে বেশি মাত্রায় গ্রহণ করলে তা মাদক হিসেবে কাজ করে।
কেন CORE-X ফেনসিডিলের চেয়েও ভয়ংকর?
সহজে বহনযোগ্য, তুলনামূলক সস্তা, গন্ধ কম, সহজে লুকানো যায়, দ্রুত নেশা ধরায়, বারবার সেবনের প্রবণতা তৈরি করে, ফলে এটি যুব সমাজের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
CORE-X সেবনের ক্ষতিকর প্রভাব
নিয়মিত সেবনে দেখা যায়, বিবেক ও বুদ্ধি শক্তি লোপ, অতিরিক্ত ঘুম, অসচেতনতা,মানসিক ভারসাম্যহীনতা, শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা, আসক্তি তৈরি হয় (Dependency), সামাজিক ও পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা, দীর্ঘমেয়াদে এটি মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
সমাজে এর প্রভাব
মাদকাসক্ত ব্যক্তি, চুরি, ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে,সহজে সহিংস হয়ে ওঠে, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হয়,কর্মক্ষমতা হারায়, ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।
আইনগত অবস্থান (বাংলাদেশ)
Codeine-যুক্ত কাশির সিরাপ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতাভুক্ত, প্রেসক্রিপশন ছাড়া আমদানি, বিক্রি ও সেবন শাস্তিযোগ্য অপরাধ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশ অভিযান চালাতে পারে।
করণীয় (সচেতন মহলের মতামত)
মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত অভিযান, অভিভাবকদের সচেতনতা, যুব সমাজকে খেলাধুলা ও কর্মমুখী করা, মসজিদ-মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা।
সচেতন মহলের অভিমত, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে ফরিদপুরের যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে পতিত হবে। তাই মাদক নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অভিযান, সামাজিক প্রতিরোধ এবং অভিভাবক ও জনপ্রতিনিধিদের সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করছেন তারা।
ফরিদপুরের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে এখনই সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা প্রয়োজন।